এমপি আনার হত্যায় আরও ২ জনের সম্পৃক্ততার তথ্য

জাতীয়

ডেস্ক: এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার খুনের ঘটনায় আরও দুজনের জড়িত থাকার বিষয়ে তথ্য পেয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ(ডিবি)। তারা হলেন তাজ মোহাম্মদ খান ওরফে হাজী ও মো. জামাল হোসেন। দুজনেরই বাড়ি ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে। খুনের ঘটনায় মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে চিহ্নিত মো. আক্তারুজ্জামান ওরফে শাহীনের বাড়িও একই এলাকায়।

ডিবি সূত্র বলছে, তাজ ও জামাল দুজনেই আক্তারুজ্জামানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। খুনের ঘটনায় সন্দেহভাজন যে ১০ আসামির ব্যাংক হিসাবের তথ্য অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডিবি, সেই তালিকায় তাদের নাম রয়েছে। ডিবির আবেদনের ভিত্তিতে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে ওই দুজনসহ ১০ জনের ব্যাংক হিসাবের তথ্য সরবরাহ করতে নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ।

যে ১০ জনের ব্যাংক হিসাব খোঁজা হবে, তাদের মধ্যে পলাতক রয়েছেন পাঁচজন। তারা হলেন আনোয়ারুল হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে চিহ্নিত মো. আক্তারুজ্জামান ওরফে শাহীন, মোস্তাফিজুর রহমান, ফয়সাল আলী সাজি, চেলসি চেরি ওরফে আরিয়া, তাজ মোহাম্মদ খান ওরফে হাজী ও মো. জামাল হোসেন।

এর মধ্যে তাজ ও জামাল কীভাবে খুনের ঘটনায় জড়িত, আদালতে দেওয়া ডিবির আবেদনে তা উল্লেখ করা হয়নি। আবেদনে বলা হয়েছে, খুনের ঘটনার তদন্তে ওই দুজনের সম্পৃক্ততার বিষয়ে তথ্য পাওয়া গেছে।

ডিবি সূত্র আরও বলছে, তাজ ও জামালের সঙ্গে এমপি আনোয়ারুল আজীম খুনের মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে চিহ্নিত মো. আক্তারুজ্জামানের যোগাযোগ ছিল।

আনোয়ারুল আজীম খুন হওয়ার পর গত ২০ মে আক্তারুজ্জামান ঢাকা থেকে প্রথমে দিল্লি যান। সেখান থেকে তিনি নেপালের কাঠমান্ডু যান। এরপর দুবাই হয়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছেন বলে ডিবির তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানতে পেরেছে।

ডিবি সূত্র বলছে, সন্দেহভাজন আসামিদের মধ্যে মোস্তাফিজুর ও ফয়সাল সংসদ সদস্য খুন হওয়ার আগে গত ২ মে কলকাতায় যান। তারা দেশে ফিরে আসেন ১৯ মে। দুজনের বর্তমান অবস্থান এখন কোথায়, সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারেনি ডিবি। দুজনের বাড়ি খুলনার ফুলতলায়। খুনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নকারী হিসেবে চিহ্নিত শিমুল ভূঁইয়ার বাড়িও একই এলাকায়।

ব্যাংক লেনদেনের তথ্য চেয়ে ডিবির করা আবেদনে সন্দেহভাজন আরেক আসামি হলেন চেলসি চেরি। তিনি এখন পলাতক। গত ২০ জানুয়ারি শিলাস্তি রহমানের (গ্রেপ্তার হওয়া আসামিদের একজন) সঙ্গে তিনি কলকাতায় যান। দুজন ফিরে আসেন ৩০ জানুয়ারি। ওই সময় কলকাতায় ছিলেনি এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার। তখন কলকাতায় অবস্থান করছিলেন আক্তারুজ্জামান ও গ্রেপ্তার হওয়া আরেক আসামি শিমুল ভূঁইয়া।

ব্যাংক হিসাবের তথ্য চাওয়া অন্য পাঁচজনের মধ্যে শিমুল ভূঁইয়া (সৈয়দ আমানুল্লাহ), তার ভাতিজা তানভীর ভূঁইয়া ও শিলাস্তি রহমানকে দ্বিতীয় দফায় রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ডিবি। বাকি দুজনের মধ্যে ‘কসাই’ জিহাদ হাওলাদার ভারতের কলকাতায় গ্রেপ্তার হয়েছেন। আর নেপালে আটক আছেন মো. সিয়াম হোসেন।

গত ১৩ মে কলকাতার একটি ফ্ল্যাটে খুন হন ঝিনাইদহ–৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার। তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, খুনের পর দেহ খণ্ড খণ্ড করে তা গুম করতে সরাসরি ভূমিকা রাখেন নেপালে আটক ভোলার বোরহানউদ্দিনের সিয়াম হোসেন। তার সঙ্গে ছিলেন কলকাতায় আটক ‘কসাই’ জিহাদ হাওলাদার। জিহাদের দেওয়া তথ্যে মরদেহের সন্ধানে কলকাতার ভাঙড়ের বাগজোলা খালে তল্লাশি চালানো হয়। কিন্তু সেখানে মরদেহের খণ্ডাংশ না পাওয়ায় সিয়ামকে খুঁজছিলেন বাংলাদেশ ও ভারতের গোয়েন্দারা।

এর মধ্যে বৃহস্পতিবার নেপালে আটক হন সিয়াম। সংসদ সদস্য খুনের ঘটনায় সিয়ামের কাছ থেকে আরও তথ্য সংগ্রহ করতে ডিবিপ্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের নেতৃত্বে তিন সদস্যদের একটি দল নেপাল সফরে যান। এই দলের আজ মঙ্গলবার ঢাকায় ফেরার কথা রয়েছে। এদিকে সিয়ামের বিরুদ্ধে সোমবার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন ঢাকার আদালত।

সংসদ সদস্য খুনের ঘটনায় ঢাকার শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা হয়েছে। এ মামলার সূত্র ধরে নেপাল থেকে সিয়ামকে ফেরাতে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলকে চিঠি দিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তরের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি)।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *